দিনে বেশ কয়েকবার নিজের ফেসবুক একাউন্টে না ঢুকলে যেন এখন আর কারো দিন ভাল যায় না তাই না? ৩ বেলা খাওয়া দাওয়া যেমন দরকারী তেমনি নিয়ম করে ফেসবুকে আপডেট দেয়াটাও দরকারী কি বলেন? ইন্টারনেট ব্যবহার করেন কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করেন না এধরনের মানুষ এখন পাওয়া দুস্কর। কিন্তু জানেন কি ফেসবুকে আপনি যতবার লগিন করেন বা যতবার স্ট্যাটাস আপডেট দেন অথবা ছবি আপলোড করেন অথবা যা কিছুই শেয়ার করেন না কেন, আপনি আসলে ফেসবুককে টাকা দিচ্ছেন এবং সেই সাথে আরো অনেক কিছুই দিয়ে দিচ্ছেন। আর কি কি দিচ্ছেন সেটাতে একটু পরে আসি। আগে টাকার কথাটাই শেষ করি।
যখনই আপনি কোন আপডেট দেন বা কোনকিছু শেয়ার করেন ফেসবুকে তখন সেই পোস্টটি একটি কন্টেন্ট পেজ তৈরী করে। এবং সেই নতুন কন্টেন্ট পেজটিতে থাকে নানারকমের বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপন আবার আপনার এবং আপনার ফেসবুক বন্ধুদের অনলাইন কার্যকলাপের সাথে রিলেটেড থাকে। প্রতিটি পোস্ট – একটি সামান্য এক লাইনের স্ট্যাটাস হতে শুরু করে ভিডিও – সবকিছুতেই একটি নতুন কন্টেন্ট পেজ তৈরী হয় যা আপনিও চাইলে দেখতে পারেন পোস্টটী কত মিনিট আগে দেয়া হয়েছে সেই টেক্সটির উপর ক্লিক করে। আর আশেপাশে দেখবেন বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপন আবার নানা ছলে বলে কৌশলে দেয়া হয়। অনেক সময় রিকমেন্ডেড ফেসবুক পেজে লাইক দিতে বলে অথবা কোন ভিডিও দেখতে বলে অথবা অন্য কোন ওয়েবসাইটের লিঙ্ক। আর ফেসবুক এসব বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করছে বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর। ফেসবুক একটি ফ্রি সেবা হিসেবে বললেও আসলে এটি কোন ফ্রি সেবা না। এই সেবার জন্য আপনি আসলে ফেসবুককে অনেক টাকা দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু ফেসবুকের এই সেবা কিনতে গেলে আপনার খরচ হত ১০-১২ ডলার বা তার বেশী কিছু (সুত্রঃ Entrepreneur)।
শুধু তাই না, ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবসার পুরো ব্যপারটাই ইউজার রিলেটেড। অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিগত সব তথ্য আপনি জেনে না জেনে ফেসবুকে দিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফেসবুকের প্রোফাইলে যেসব তথ্য আপনি দিয়েছেন সেগুলো আসলে কিছুই না। আপনি যখন আপনার পরিবারের কোন ছবি আপলোড করে, ট্যাগ করেন এবং কোন ভিডিও আপলোড করেন, ফেসবুক তখন এখান থেকে তথ্য এক্সট্রাক্ট করে। তাঁদের সিস্টেম অনেক কিছুই অনুমান করতে পারবে আপনার শেয়ার করা নানা ধরনের পোস্ট দিয়ে। যেমন আপনি কি পছন্দ করেন, আপনার বন্ধু কারা, গ্রুপ কারা, আপনি কখন ডিনার করেন বা কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশী যান, অনলাইনে আর কোন কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন, আপনি কি ধরনের পোশাক পছন্দ করতে পারেন, আপনি বিবাহিত কিনা, অবিবাহিত হলে কেমন মেয়ে পছন্দ – সব ধরনের তথ্য তারা বের করতে পারবে আপনার দেয়া সমস্ত পোস্ট থেকে। মোট কথা, ফেসবুকের কাছে আপনার আসলে কোন প্রাইভেসী নেই। আর এসব ডাটা তারা বিক্রি করছে বড় বড় বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছে বিলিয়ন ডলারে। এসব তথ্যের মূল্য অনেক। টার্গেটেড বিজ্ঞাপন তৈরীর জন্য অন্যতম।
যেমন আপনি কোন অনলাইন শপিং এর সাইটে ব্রাউজ করে ক্যামেরা খুজে বেড়াচ্ছেন। এর কিছুক্ষন পর আপনি ফেসবুকে ঢুকলেন বা ফেসবুকের পেজ রিফ্রেশ করলেন এবং দেখতে পাবেন, ডান দিকের বিজ্ঞাপন সারিতে আপনি ঠিক যে ক্যামেরাটা নিয়ে অনলাইনে সার্চ করছিলেন, ঠিক সেই ক্যামেরাটার কোন বিজ্ঞাপন অথবা রিলেটেড কোন কিছু। এর মানে হলো ফেসবুক আপনার ব্রাউজিং হিস্টরী প্রতিনিয়ত অবজার্ভ করছে ফেসবুকে ইন্সটল করা কুকিজের মাধ্যমে। এত গেলো ওয়েবসাইটের কথা। ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপটি আরো বেশী ভয়ানক! এই সফটওয়ার যে শুধু আপনার তথ্য দিচ্ছে তা না, আপনার মোবাইলের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে আপনার আশে পাশে কি হচ্ছে বা কি ধরনের পরিবেশে আছেন আপনি তাও পাঠিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের সার্ভারে। অর্থাৎ ফেসবুক প্রতিনিয়ত আপনার সবকিছু শুনছে। থাকুক মোবাইল আপনার পকেটে কিন্তু অ্যাপতো চালু আছে!
এভাবে নানা উপায়ে, ছলে বলে কৌশলে আপনি হয়ে উঠেছেন একটি প্রোডাক্ট। জি হ্যাঁ, ফেসবুকের ব্যবসার পন্য আপনি আর আপনাকেই আর আপনার জীবনের তথ্যকেই বিক্রি করা হচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত। আপনি ফেসবুক ব্যবহারকারী না। মূলত আপনি তাঁদের পন্য। পৃথিবীর প্রতি ৬ জন মানুষের ১ জন এখন ফেসবুক ব্যবহার করে এবং শুধু একবার চিন্তা করে দেখেন, তাঁদের কাছে কি পরিমান তথ্য আছে। ফেসবুক এমনকি ইন্টারনেটও কন্ট্রোল করছে বা করতে চাইছে নানা উপায়ে। আপনার দেয়া তথ্য দিয়ে ফেসবুক কি করছে তা কিন্তু আপনাকে বলছে না এবং বলবেও না। কিছু কিছু ডাটা হয়তো তারা বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে কিন্তু বাকী তথ্য দিয়ে তারা কি করছে আসলেই কেউ জানেনা।
হয়তো ভবিষ্যতে দেখা যাবে ফেইক ক্লোন আইডির মত আপনার একটি ফেইক ভার্সন, ক্লোন ভার্সন বের হয়ে গেছে – ভবিষ্যতের কোন একটা সময়ে।
বিঃদ্রঃ আমাদের পোষ্ট গুলো যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। তাহলে আর ভাল পোষ্ট নিয়ে হাজির হব।
Please do not enter any spam link in the comment box.