সম্পূর্ণ না পড়েন তাহলে অনেক কিছুই অজানা রয়ে যাবে। তাই কষ্ট করে ধর্য্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়েন।
কাবা শরিফের এলাকা মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সংরক্ষিত একটি নিরাপদ স্থানে। এখানে মানুষ, পশু-পাখি, মশা-মাছি, গাছপালা, ফুল এমনকি এখানকার ঘাসও সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে মুক্ত। প্রথম কাবা ঘর নির্মিত হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের জীবদ্দশায়। পৃথিবীর প্রথম ইবাদত ঘর কাবা শরীফ নির্মাণ শেষে তিনি পবিত্র এই ঘরের চারদিকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন। এরপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ ঘর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন যাতে উনার পরিবার ও বিশ্বের মুসলমানরা এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। পরে অবশ্য বহুবার এই পবিত্র ঘরের সংস্কার কাজ সাধিত হয়েছে।
পবিত্র কাবা ঘরের উচ্চতা ১৫ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ১২ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার। একটি সমতল ক্ষেত্রের মাঝখানে অবস্থিত এ ঘরের চারদিকে রয়েছে মসজিদুল হারাম। এই পবিত্র ঘর খুবই সাদামাটা ও জাঁকজমকহীন হওয়া সত্ত্বেও দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর। কাবা শরিফের সাদামাটা সৌন্দর্য ও অনাড়ম্বরতাই তাঁকে দিয়েছে অনন্যতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কাবা শরিফের স্থান নির্ধারণ করেছেন পাথুরে পাহাড় ও স্বল্প পানিযুক্ত একটি কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের জাগরণের ও দৃঢ়তার মাধ্যম হিসেবে। মহান আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বনি আদম যেনো এই পবিত্র ঘরমুখি হয় এবং তাদের মনকে এদিকে কেন্দ্রীভূত করে ও এ ঘরের চারদিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই- এ কথার স্বাক্ষ্য দেয়।
মহান আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় হলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ও সুন্দরতম স্থানে পবিত্র কাবা কে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। তিনি এ ঘরের পাথরগুলোকে সবুজ মর্মর বা লাল চুনি পাথরের করতে পারতেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদের নানা বিপদ-আপদের মধ্যে পরীক্ষা করেন। তিনি চান তারা নানা অভাব-অনটনের মধ্যেও উনার ইবাদত করুক। তাই তিনি তাদেরকে দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত করেন। এসব কিছুই দেয়া হয়েছে তাদের মন থেকে সব ধরনের অহংকার ও গরিমা দূর করার জন্য এবং তাদেরকে বিনয়ী করে তোলার জন্য এবং উনার দয়া ও ক্ষমা সহজতর করার উপায় হিসেবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র কাবা ঘরকে নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত করে এ ঘরকে মহিমান্বিত করেছেন। কাবাকে মানুষের জন্য ইবাদতের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে এ ঘরের চারদিকে শিকারসহ গাছ উপড়ানো নিষিদ্ধ করে পবিত্র মক্কা নগরীকে মানুষের জন্য নিরাপদ অঞ্চল করেছেন। অহান আল্লাহ পাক তিনি এ ঘরের মর্যাদা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দূর-দূরান্ত থেকে মানুষকে এ ঘরের কাছে আসতে বলেছেন। যাতে তারা এ ঘরের মালিকের প্রতি বিনম্রতা দেখাতে পারে এবং মহান আল্লাহ পাঁকের গুণে নিজেদের গুণান্বিত করতে পারে। ‘
পবিত্র কাবা ঘর এমন স্থান, যার চারদিকে প্রদক্ষিণ করেছেন নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামরা। ফেরেশেতা আলাইহিমুস সালামরাও তওয়াফ করেছেন এই পবিত্র ঘর। পবিত্র কাবা শরীফ মুসলমানদের ইবাদতের মূল অক্ষ এবং মুসলমানদের সামাজিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র এমনকি সমস্থ পৃথিবীর মধ্যস্থল। মুসলমানরা প্রতিদিন কাবামুখি হয়ে ৫ বার নামাজ আদায় করেন পৃথিবীর সমস্থ দেশ এলাকা থেকে। আর পবিত্র জিলহজ মাসে বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মুসলমান কাবাকে ঘিরে গড়ে তোলেন ঐক্য, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার মিলনমেলা। এভাবে কাবা শরীফকে ঘিরে মুসলমানদের তথা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আত্মসমর্পিত মানুষদের একত্ববাদের চেতনার সবচেয়ে সুন্দরতম ও সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ ঘটছে।
পবিত্র ক্বাবা শরীফ কোরআন সুন্নাহর আলোকে।
পবিত্র কাবা শরিফ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ পাঁকের জীবন্ত নিদর্শন। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি কাবা শরীফকে উনার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে পবিত্র কাবা শরিফের অবস্থান। যা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন ড. হুসাইন কামাল উদ্দীন আহমদ। এ বিষয়ে উনার থিসিসের শিরোনাম হলো—‘ইসকাতুল কুর্রাতিল আরধিয়্যা বিন্ নিসবতে লি মাক্কাতিল মুকার্রামা।’ (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া, রিয়াদঃ ২/২৯২)
ওই থিসিসে তিনি প্রাচীন ও আধুনিক দলিল-দস্তাবেজের আলোকে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে পবিত্র কাবা শরীফই পৃথিবীর মেরুদণ্ড ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। ইসলামের রাজধানী হিসেবে পবিত্র কাবা শরীফ একটি সুপরিচিত নাম। পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ পবিত্র কাবা শরীফকে কেন্দ্র করেই। পবিত্র মক্কা ও কাবা শরীফ এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উনার পদচিহ্ন-স্মৃতি। ইহুদি ও নাসারাদের নবী আলাইহিমুস সালামরা উনারই সুপুত্র ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর বংশোদ্ভূত হওয়ায় পবিত্র কাবা শরীফের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তাদের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত।
পবিত্র কাবা শরীফ গৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। পবিত্র আল কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় বরতমান নাম (পবিত্র মক্কা শরীফ নগরীতে) অবস্থিত।’ (সুরাঃ আলে ইমরান শরীফ, আয়াত শরীফ ৯৬)
পবিত্র কাবা শরীফ গোটা বিশ্বের স্তম্ভস্বরূপ, বিশ্বের ব্যবস্থাপনা ও বাইতুল্লা শরীফের মধ্যে একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবাহানাহু ওয়া তাআলা তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত গৃহ কাবাকে মানুষের স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্বের কারণ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরাঃ মায়েদা শরীফ, আয়াত শরীফ ৯৭)
ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে পবিত্র কাবা শরীফ কে কেন্দ্র করে। যেমনঃ পবিত্র নামাজ, হজ, কোরবানি, পশু জবাই ও মৃতের দাফনসহ অনেক ইবাদত আদায় করতে হয় পবিত্র কাবা শরীফের দিকে ফিরে। হাদিস শরীফের ভাষ্য মতে, পবিত্র কাবা শরীফ গৃহে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে এক লাখ রাকাত নামাজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। পবিত্র কাবা শরিফের এ বিশেষ মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের কথা বিবেচনা করে ইসলাম পবিত্র কাবা শরীফের দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্য থেকে কেউ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে বসবে, সে যেনো কাবাকে সামনে বা পেছনে না রাখে।’ (মুসলিম শরিফ)
মহান আল্লাহ পাঁক উনার নির্দেশে সর্বপ্রথম সেখানে কাবাঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামরা। আদম আলাইহিস সালাম-এর সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে পবিত্র কাবা শরীফের সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক যখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তখন উনারা আসমানে পবিত্র বায়তুল মামুর শরীফের আদলে নির্মিত একটি ইবাদতখানার জন্য প্রার্থনা করেন। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র বাইতুল মামুর শরীফের আদলে পৃথিবী সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে ফেরেশতাদের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফ সৃষ্টি করেন। তখন তা সাদা ফেনা ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। মহান আল্লাহ পাঁক উনার আরশ ছিলো পানির ওপর। হাদিস শরীফের ভাষ্য মতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব মহাদেশ। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পাহাড় সৃষ্টি করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরাঃ আন নাহল শরীফ, আয়াত শরীফ ১৫)
বেহেশত থেকে দুনিয়ায় আগমনের পর হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম-এর অনুরোধে সেটিকেই তাঁদের ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করে দেন মহান আল্লাহ তাআলা। নুহ আলাইহিস সালাম-এর সময়কার মহাপ্লাবনে পবিত্র কাবা শরীফ ঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে মহান আল্লাহ পাঁক উনার নির্দেশে আবার কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও উনার ছেলে ইসমাইল আলাইহিস সালাম। এর পর থেকে কখনো বন্ধ থাকেনি পবিত্র কাবা শরীফের জিয়ারত। সর্বশেষ নবী ও রাসুল নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার আমলে এ আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণতা পায়। নবুয়ত লাভের ২২ বছর পর ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মহান আল্লাহ পাঁক উনার নির্দেশ পেয়ে পবিত্র হজ্জ পালন করেন নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। উনার দেখানো নিয়ম অনুসারেই প্রতিবছর শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র হজ্জ পালন করেন লক্ষ লক্ষ মুসলমানরা।
পবিত্র কাবা শরীফের প্রাঙ্গণে জমে উঠছে মুসলমানদের আন্তর্জাতিক মিলনমেলা। স্মরণাতীতকাল থেকে মক্কায় হজব্রত পালনকারীদের জমায়েত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কর্তৃক পবিত্র কাবা শরীফ গৃহ নির্মিত হওয়ার পর মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন, ‘বিশ্ববাসীকে এ ঘর তওয়াফ করার আহ্বান জানাও’। তিনি আরজ করেন, ‘হে প্রভু! এখানে তো জনমানবহীন প্রান্তর। আমার আহ্বান জগদ্বাসী কিভাবে শুনবে? মহান আল্লাহ পাক বলেন, তোমার দায়িত্ব কেবল ঘোষণা দেওয়া। পৌঁছানো আমার কাজ। তারপর তিনি মাকামে ইব্রাহিমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, ‘ওহে লোক সকল, তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করে উনার জিয়ারত তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা এ ঘর প্রদক্ষিণ করতে এসো।’ পয়গম্বরের এ আওয়াজ মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেন। কিয়ামত অবধি যত মানুষের আগমন ঘটবে এ ধরণীতে, সবার কানে এ আওয়াজ পৌঁছেছে। যারা ‘লাব্বাইকা’ বলেছেন, তাঁরা এ ঘরের জিয়ারত করে ধন্য হবেন। হজরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তিনি বলেন, পবিত্র হজ্জে ‘লাব্বাইকা’ বলে যে তালবিয়া পাঠ করা হয়, তা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-এর সেই আহ্বানেরই জবাব। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে পবিত্র হজ্জের ঘোষণা প্রচার করো। তারা দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটে সওয়ার হয়ে তোমার কাছে আসবে।’ (সুরাঃ হজ্জ শরীফ, আয়াত শরীফ ২৭)
পবিত্র কাবা শরীফ বিশ্বমোমেনের সম্মিলনস্থল। ঐক্যের প্রতীক। ভালোবাসার স্পন্দন। মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমি পবিত্র কাবা শরীফ ঘরকে মানুষের প্রত্যাবর্তনস্থল ও শান্তির আঁধার করেছি।’ (সুরাঃ বাকারা শরীফ, আয়াত শরিফঃ ১২৫) কাবাগৃহের অসিলায় মহান আল্লাহ পাক পবিত্র মক্কা শরীফ বাসীকে সর্বদা শত্রুর আক্রমণ থেকে নিরাপদে রেখেছেন। পবিত্র কাবা শরীফ ধ্বংস করতে আসা হাবশার দাম্ভিক সম্রাট আবরাহাকে অতি ক্ষুদ্র পাখি দ্বারা সদলবলে নিচিহ্ন করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি পবিত্র মক্কা শরীফকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুষ্পার্শ্বে যারা রয়েছেন, তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। তবে কি তাঁরা মিথ্যায় বিশ্বাস করবে এবং মহান আল্লাহ পাঁকের নেয়ামত অস্বীকার করবে?’ (সুরাঃ আনকাবুত শরীফ, আয়াত শরীফ ৬৭)
কাবার সীমানায় প্রবেশকারী জীবজন্তুও নিরাপদ জীবন লাভ করে।
পবিত্র কাবা অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের প্রতীক। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর পবিত্র বাক্কায়(পবিত্র মক্কা শরীফ নগরীতে) অবস্থিত। এ ঘর বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েতস্বরূপ। এতে রয়েছে বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন। মাকামে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উনাদের একটি। যে ব্যক্তি এর ভেতরে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তা লাভ করে। (সুরাঃ আলে ইমরান শরীফ, আয়াত শরীফ ৯৬-৯৭)
আদিকাল থেকেই এ গৃহের ইবাদত ও সম্মান অব্যাহত রয়েছে। জাহেলি যুগে মক্কাবাসী মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকলেও তারা কাবাকে যথেষ্ট সম্মান দেখাত। তারা কাবার রবের নামে শপথ করত। কাবার দেয়ালে কবিতা টানিয়ে রাখত। বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতো, পবিত্র হজ্জ, ওমরাহ পালন করতো ও বহির্দেশ থেকে আগত হাজিদের খেদমত করতো। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় কুরাইশ কর্তৃক বায়তুল্লাহ শরীফের পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদ স্থাপনকে কেন্দ্র করে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক গোত্রই কামনা করছিল এই অনন্য মর্যাদার কাজটি যেনো তারা আনজাম দেয়। অবশেষে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিজ্ঞোচিত ফয়সালায় সবাই সন্তুষ্ট হন। কুরাইশদের অঙ্গীকার ছিল যে তারা পতিতাবৃত্তি, চুরি, সুদ ইত্যাদি অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ বায়তুল্লাহ নির্মাণের কাজে ব্যবহার করবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র। তিনি পবিত্রতা ভালোবাসেন।
পবিত্র কাবা শরীফের চতুষ্পার্শ্বে রয়েছে বরকতময় বহু নিদর্শন। মাকামে ইব্রাহিম, মুলতাজিম, হাজরে আসওয়াদ, মিজাবে রহমত, হাতিম, মাতাফ, রুকনে ইয়ামানি, প্রত্যেকটি বরকতের আধার। এগুলোর কাছে থেকে দোয়া করলে তা কবুল হয়। এ কারণেই পবিত্র কাবা শরীফের পানে মোমেন হৃদয় বারবার ছুটে যায়। এটি পবিত্র কাবা শরীফের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যও বটে। আধুনিক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম কোনো মনোরম দৃশ্য বা পর্যটনস্পট এক-দুবার পরিদর্শনেই মানব মন পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু শুষ্ক বালুকাময় মরু আরবের কাবাঘরে না আছে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট, না আছে চিত্তাকর্ষক কোনো বস্তু। তবুও সেখানে পৌঁছার আকুল আগ্রহ মোমেনের মনে ঢেউ খেলতে থাকে। সে আগ্রহে কখনো ভাটা পড়ে না।
সবাইকে ধন্যবাদ কষ্ট করে লিখাটি পড়েছেন বলে, অনুরোধ রইলো শেয়ারের যেনো অন্যরাও পবিত্র এই ঘর সম্পর্কে জানতে পারে আর কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন।
Bengal Tiger
Please do not enter any spam link in the comment box.