বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৩ লাখ
ডায়াবেটিক রোগী আছে।
এদের মধ্যে প্রায় ৫৫
লাখ লোক জানেন না
যে, তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। অসচেতনতা
কিংবা উপসর্গহীনতার কারণেই তারা জানেন
না। শরীরের
প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনষ্টকারী
এ ঘাতক ব্যাধি লুকিয়ে
রয়েছে কিনা আপনার দেহে
তা আজই জেনে নেয়া
উচিত। খাদ্যাভ্যাস,
অলস জীবনযাপন এবং গর্ভাবস্থায় বিশেষ
যত্নের অভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
আমাদের দেশে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন আগামী
দু’দশকে আমাদের দেশে
ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ১.৫ কোটি ছাড়িয়ে
যাবে। ডায়াবেটিস
একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আপনার
যদি ডায়াবেটিস না থাকে তাহলে
এখনই প্রতিরোধের সময়। জেনে
নিন লাইফস্টাইলে সামান্য পরিবর্তন এনে কিভাবে ডায়াবেটিস
প্রতিরোধ করা যায়।
ডায়াবেটিস কি?
গ্রিক শব্দ ডায়াবেটিস অর্থ
চলে যাওয়া বা নির্গত
হওয়া। আর
মেল অর্থ চিনি।
এই মেল থেকেই মেলাইটাস
শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে। ডায়াবেটিস
মেলাইটাস অর্থ দেহ থেকে
প্রস্রাবের সঙ্গে চিনি বা
গ্লুকোজ বের হয়ে যাওয়া।
ডায়াবেটিস কেমন রোগ:
ডায়াবেটিস বিপাকজনিত রোগ। এ
রোগে রক্তে সুগারের পরিমাণ
দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়।
সুস্থ লোকের রক্তরসে সুগারের
পরিমাণ সকালে অভুক্ত অবস্থায়
প্রতি লিটারে ৩.৫-৫.৫ মিলিমোল
থাকে এবং খাবার দুই
ঘণ্টা পরে প্রতি লিটারে
৭.৮ মিলিমোলের কম
থাকে। সকালে
অভুক্ত (ফাস্টিং) অবস্থায় রক্তরসে সুগারের পরিমাণ প্রতি লিটারে
৫.৬-৬.৯
মিলিমোল থাকলে অথবা ৭৫
গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা
পরে রক্তরসে সুগারের পরিমাণ প্রতি লিটারে
৭.৮-১১ মিলিমোল
হলে তাকে প্রি-ডায়াবেটিস
হিসেবে ধরা হয়। সকালে অভুক্ত অবস্থায়
রক্তরসে সুগারের পরিমাণ প্রতি লিটারে
৭.০ মিলিমোল বা
তার বেশি হলে অথবা
৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার
দুই ঘণ্টা পরে রক্তরসে
সুগারের পরিমাণ প্রতি লিটারে
১১.১ মিলিমোল বা
তার বেশি হলে ডায়াবেটিস
হিসেবে ধরা হয়।
রক্তে গ্লুকোজ কেন
বাড়ে:
মানবদেহে পেটের অভ্যন্তরে অগ্নাশয়
নামক একটি গ্রন্থি আছে। এটি
থেকে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন
নিঃসৃত হয়। আমরা
সাধারণত যে খাবার খাই
তার মধ্য শর্করা, আমিষ
ও চর্বি থেকে রাসায়নিক
প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য
শক্তি উৎপন্ন হয়।
এ ক্ষেত্রে শর্করা যে রাসায়নিক
প্রক্রিয়ায় শরীরে ব্যবহার উপযোগী
হয় তাতে ইনসুলিন আবশ্যক। ইনসুলিন
রক্তের গ্লুকোজকে কোষের ভেতরে ঢুকিয়ে
দেয়। কোষের
ভেতরে ঢুকে গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনে
পরিবর্তিত হয় এবং ভেঙে
গিয়ে ক্যালরিতে রূপান্তরিত হয়। এই
ক্যালরিই দেহে শক্তির সৃষ্টি
করে। ইনসুলিন
না থাকলে এ কাজ
সম্পন্ন হয় না বলে
গ্লুকোজ ও অন্যান্য খাদ্য
উপাদানের বিপাকে বিগ্ন ঘটে। ফলে
রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়
এবং অতিরিক্ত সুগার প্রস্রাবের সঙ্গে
বেরিয়ে আসে। ফলে
দেহে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব দেখা
দেয়। আক্রান্ত
ব্যক্তি দুর্বলতা অনুভব করে।
ক্রমান্বয়ে তার শরীরে দেখা
দেয় নানা ধরনের জটিলতা।
কেন ইনসুলিনের অভাব
হয়:
অনেক কারণ আছে।
বংশগত কারণে হয় আবার
জীবাণুর সংক্রমণেও হতে পারে।
এক ধরনের ভাইরাস এর
জন্য দায়ী। এরা
দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ইনসুলিন উৎপাদনকারী
অগ্নাশয়ের কোষগুলোকে আক্রমণ করে।
অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সেল বিজ্ঞান সাময়িকীতে
জেনেভার বার্নাড কনরাড ও বার্নাড
ম্যাসের নেতৃত্বাধীন গবেষক দলের প্রকাশিত
একটি গবেষণাপত্রে তারা জানান, এ
ভাইরাস মানবদেহে লুকায়িত অবস্থায় সুপারটিজেন নামক এক ধরনের
অণুপদার্থ তৈরি করে।
সুপারটিজেন নামক এই তরল
পদার্থটি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার
প্রধান সৈনিক লিস্ফোসাইটকে অত্যধিক
তৎপর করে তোলে।
এগুলো তখন অগ্নাশয়ে ইনসুলিন
উৎপাদক বিটা কোষকে আক্রমণ
করে বসে। ফলে
ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়
এবং রক্তে ইনসুলিনের অভাব
দেখা দেয়। ফলে
ডায়বেটিস রোগের সূত্রপাত হয়।
Please do not enter any spam link in the comment box.